English Version
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০১৭ ১০:৫৭

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিতে হেভিওয়েট, বিএনপিতে সঙ্কট

অনলাইন ডেস্ক
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিতে হেভিওয়েট, বিএনপিতে সঙ্কট

গাইবান্ধা-৫ আসনটি সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত। আসনটি এক সময় জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে পরিচিতি থাকলে এখন সেখানে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রভাব। এই আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। কিন্তু তার সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছেন একাধিক দলীয় মনোনায়নপ্রত্যাশী। তবে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারপারসন হেভিওয়েট প্রার্থী রওশন এরশাদ। দলে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অপরদিকে বিএনপির ভোট থাকলেও যোগ্য নেতার অভাবে আসনটি প্রতিবারই হাতছাড়া হচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসনে (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আওয়ামী লীগের দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী ইতোমধ্যে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও সভা-সমাবেশ করে চলেছেন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে নেতাকর্মীরা নিশ্চিত হয়েছেন। অপরদিকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনও বসে নেই। তিনিও দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে কে দলীয় মনোনয়ন পাবেন তা নিয়েও এলাকায় জল্পনা-কল্পনা চলছে।

ফজলে রাব্বী মিয়া জাতীয় পার্টির টিকিটে চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করার পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী বেগম রওশন এরশাদকে পরাজিত করে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। ফলে এতবার সংসদ সদস্য থাকায় সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছেন তিনি। আবারো নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার কথা বলছেন তার সমর্থকরা। আগে থেকেই সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করছেন। নেতাকর্মীরাও এখন থেকেই তার জন্য ভোট প্রার্থনা করে চলেছেন।

অপরদিকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। তিনি দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর সমর্থন পাওয়ার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত দিনে নেতৃত্ব শূন্যতা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মকান্ডে যুক্ত করছেন। ফলে বিচ্ছিন্ন ও ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করছেন বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা। এ দুটি উপজেলায় মাহমুদ হাসান রিপনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তার বিজয় শতভাগ নিশ্চিত হবে বলে দাবি করেছেন তার সমর্থকরা।

অপরদিকে দলীয় মনোনায়ন প্রত্যাশা করছেন আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থী অবিভক্ত বাংলার কৃষিমন্ত্রী মরহুম আহমেদ হোসেন সরকারের (উকিল) নাতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবর রহমান নিটল। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনিও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় এলাকায় সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।

দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধে বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ প্রার্থী হতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ফুলছড়ি উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন আহম্মেদ বলেন, এ আসনে বেগম রওশন এরশাদ এমপি থাকাকালে ফুলছড়ি ও সাঘাটা নদী ভাঙন রোধে ব্যাপক কাজ করেছেন। তার সময় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে। রওশন এরশাদ প্রার্থী হলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ বলে তিনি দাবি করেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করলে তার পরিবর্তে প্রার্থী হবেন সাঘাটা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক এবং সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ এইচ এম গোলাম শহীদ রঞ্জু। তিনি দুইবার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করে চলেছেন। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অপরদিকে স্বাধীনতার পরপরই একবার বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রোস্তম আলী মোল্লা। তিনি অসুস্থতার কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। যোগ্য প্রার্থী না থাকায় বিপুল ভোট ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও বিএনপির প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এবার তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে থেকে কাজ করছেন সাঘাটা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা রাহিদুল ইসলাম রাহী। তিনি নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন। রাহিদুল ইসলাম রাহী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে জয়লাভ করা সম্ভব বলে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন। বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সমাজসেবক নাজেমুল ইসলাম নয়ন। তিনি দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। এদিকে সাঘাটা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ আলী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলে নেতাকর্মীরা জানান। গাইবান্ধা-৫ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ডা. একরাম হোসেন। চিকিৎসাসেবায় তার অবদান থাকায় তিনি এ দুটি উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে সুপরিচিত এবং তার নিজস্ব ভোটব্যাংক রয়েছে বলে দাবি করেন।