English Version
আপডেট : ৮ অক্টোবর, ২০১৭ ১০:৫৪

দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া : হাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা

অনলাইন ডেস্ক
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া : হাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা

আগামী ২২ অক্টোবর দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলটির একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার তারিখ নিয়ে যেসব খবর রটেছে, তার সবই গুজব। কারণ, খালেদা জিয়া যখন লন্ডনে যান, তখনই ২২ অক্টোবর তার দেশে ফেরার দিন ঠিক হয়েছিল। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলার বেশ কয়েকটিতে তার হাজিরার দিনও ধার্য রয়েছে। তাই চলতি মাসেই তার দেশে ফেরা অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা গেছে।

এরআগে সংবাদমাধ্যমে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে নানা ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় নেতাকর্মীরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। এতে দলের ভেতরে-বাইরে একধরনের অনিশ্চয়তা দানা বাধতে থাকে। অন্যদিকে সরকারি দল থেকেও বলা হচ্ছিল, তিনি আর দেশে ফিরবেন না। তাছাড়া লন্ডনে তার দীর্ঘ অবস্থান নিয়ে সরকারি দল থেকে আরো নানা কথা বলা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, সেখানে বসে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাসহ ক্ষমতা থেকে সরাতে নীলনকশা তৈরি করছেন। চলতি মাসের ৩ তারিখে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার কথা প্রচার থাকলেও সে সময় পার হওয়ার পর জানা গেল সঠিক তথ্য।

চোখ ও পায়ের গোড়ালির চিকিৎসা নিতে গত আড়াই মাস বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি পরিবারের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন। দলীয় কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচিতে এখনো অংশ নেননি। তা ছাড়া কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে জানা গেছে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শেই একান্তে বিশ্রাম নিচ্ছেন বিএনপিপ্রধান। দলের কয়েকটি সূত্র এর আগে জানিয়েছিল সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দেশে ফিরবেন তিনি। এর আগে বলা হয়েছিল ২২-২৩ তারিখে দেশে ফিরতে পারেন। পরে অন্য একটি সূত্র জানায়, চলতি মাসের ৩ তারিখে নিশ্চিতভাবেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এ তারিখেও দেশে না আসায় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সব মহলে এখন একটাই প্রশ্ন—‘কবে ফিরবেন খালেদা জিয়া’।

জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েই দেশে ফিরবেন তিনি। কিন্তু দলের নেতাদের কেউ নিশ্চিত করে ফেরার তারিখ বলতে পারেননি। চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেও রাজনীতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের এই সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেখানে অবস্থানকালে বেশ কয়েকটি বৈঠকের গুঞ্জন শোনা গেলেও কী নিয়ে বৈঠকগুলো হয়েছে, কাদের সঙ্গে হয়েছে, এসব কোনো তথ্যই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও রয়েছে নানা কৌতূহল।

কবে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া এ বিষয়ে বিএনপির অধিকাংশ নেতারাও ছিলেন অন্ধকারে। অনেকে এ সময়ের মধ্যে লন্ডন গিয়েও দেখা পাননি খালেদা বা তারেকের সঙ্গে। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যরাও বলতে পারছেন না কিছু। দলটির নেতারা মনে করছেন, যারা খালেদার জিয়ার ডাকে লন্ডনে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন, তারা হয়তো জানেন, আসলে তিনি কবে ফিরবেন। তবে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হলেও জবাবে তারা সরাসরি বলছেন, চিকিৎসা শেষ হলেই দেশে ফিরবেন তিনি। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সহসাই দেশে আসবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার এখনো কিছু চিকিৎসা বাকি আছে। সেগুলো শেষ হলেই দেশের ফিরে আসবেন তিনি। এর বাইরে বেশি কিছু বলতে রাজি নন বিএনপির এ নেতা।

এদিকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে নানাভাবে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া আর দেশে ফিরে আসবেন না। খালেদা লন্ডন যাওয়ার পর থেকেই সরকারি দলের অধিকাংশ নেতা, মন্ত্রী বলেছেন, মামলার ভয়ে পালিয়েছেন তিনি। তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের খালেদার জিয়ার দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ে বলেন, লন্ডনে বসে দুজন মিলে (বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান) ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার, সরকারকে হটানোর। আমরা মনে করি, এর সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে দলটির যৌথসভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, লন্ডনে বসে বেগম জিয়া ও ছেলে তারেক রহমান কি ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন, তা জাতি জানতে চায়। এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তদন্তে সাহায্য করার জন্য স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, এমআই সিক্সসহ ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে লন্ডন বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে একান্ত বৈঠক করেছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। বৈঠকে কয়েকটি বিষয়ে তাদের মধ্যে মতৈক্যও হয়েছে। দেশে ফিরার পর এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন তিনি। তবে বিভিন্ন মহলে কূটনৈতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া নিজে উপস্থিত থেকে তদারকি করছেন। প্রয়োজন হলে দেশ থেকে নেতাদের ডেকে নিয়ে প্রয়োজনীয় কথা সারছেন। এ ছাড়াও মা-ছেলের বৈঠকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্যপদ, মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন কমিটি গঠন, সহায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদারের কৌশলসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই অধিক সময় ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন দলের চেয়ারপারসন।

বিএনপির গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে আসবেন। তার আগেই দেশে ফিরে আসার চিন্তাভাবনা করছেন তিনি। সফরকালে খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাদের মধ্যে একান্ত বৈঠক হতে পারে।

খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দলের কার্যক্রম প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে যখন যে বিষয়ে প্রয়োজন, সে বিষয়ে মহাসচিব কথা বলছেন। এছাড়া আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। দলীয় কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছে।