English Version
আপডেট : ৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০৯:১৬

বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় স্থানান্তর সিদ্ধান্তে তোলপাড়!

দেশে ফেরার তারিখ নিয়ে আবারও ধূম্রজাল
অনলাইন ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় স্থানান্তর সিদ্ধান্তে তোলপাড়!

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার তারিখ নিয়ে ফের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কবে দেশে ফিরবেন কেউ বলতে পারছেন না।

দীর্ঘ দুই মাস ২০ দিন ধরে চিকিৎসার কথা বলে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও এখনো ফেরার দিন নির্ধারণ হয়নি। সর্বশেষ গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাও বাতিল করা হয়েছে। এবার বলা হচ্ছে, চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে যে কোনো দিন তিনি ঢাকায় ফিরতে পারেন। চিকিৎসার কথা বলা হলেও লন্ডনে বসে এবার দল ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর মধ্যে চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘স্ট্রাকচারাল’ পরিবর্তনসহ চেয়ারপারসনের একটি কার্যালয় স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দলের ভিতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দলের কজন সিনিয়র নেতা এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং কী কারণে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে তা স্পষ্ট হওয়া দরকার বলে মনে করেন। অনেকে দলীয় পদ-পদবি থেকে বাদ পড়ার ভয়েও কাতর হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা ও কার্যালয়ভিত্তিক কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের অপসারণের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুই শীর্ষ নেতা। বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পরপরই এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। দলের ভিতরে এ নিয়ে রীতিমতো তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দুটি কার্যালয়ভিত্তিক কতিপয় নেতা ও ব্যক্তির রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এত দিন যেসব ব্যক্তি দলের যেসব সিনিয়র নেতার সঙ্গে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আসছিলেন- তাদের বাসায় বাসায় এখন প্রায় প্রতিদিনই আসা-যাওয়া শুরু করেছেন। লবিং-তদবির করছেন- যাতে দল কিংবা কার্যালয় থেকে বাদ না পড়েন। চিকিৎসার্থে যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা বলা হলেও লন্ডনে বসেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দল ও রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। দলের স্থায়ী কমিটির তিনটি শূন্য পদ পূরণ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল এবং দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়সহ রাজনৈতিক কর্মকৌশল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে পরামর্শ করছেন। আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থিতাসহ সহায়ক সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করছেন। অন্যদিকে, গত দুই মাস ২০ দিন ধরে লন্ডনে থাকাবস্থায় দলের অনেক নেতাই তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ফিরে এসেছেন। মা ও ছেলে উভয়ে কোনো নেতাকেই দেখা করার অনুমতি দেননি। তার মধ্যে অনেকে আবার তাদের সঙ্গে দেখা করতে না পারলেও দেশে ফিরে ফলাও করে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী প্রবীণ রাজনীতিক মাহিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ম্যাডাম’ কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন এখনো কেউ জানেন না। কারণ তার চিকিৎসা এখনো শেষ হয়নি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে এসে তা না শেষ করে তো ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। আর চিকিৎসা শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিদেশে বসে থাকার নেত্রী অন্তত বেগম খালেদা জিয়া নন, এটা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ভালো করেই জানেন। একই কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম সাত্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে। লন্ডন থেকে তিনি বলেন, এখনো ফেরার তারিখ ঠিক হয়নি। একমাত্র চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন তিনি (বেগম খালেদা জিয়া) কবে দেশে ফিরবেন। চিকিৎসা শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আগামী ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। তার আগেই বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন বলে আশা করছেন দলের সিনিয়র অনেক নেতা।

সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তার একান্ত বৈঠকেরও একটি শিডিউল রয়েছে। এর আগে সুষমা স্বরাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এলে বেগম খালেদা জিয়া সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। এবার খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসায় হতে পারে সেই বৈঠক। এ ছাড়াও ২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দিল্লি সফরে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ভারতের তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা এই সুষমা স্বরাজের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সুষমা স্বরাজও তাকে উষ্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শন করেন। তবে লন্ডন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা চলতি মাসে বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, চলতি অক্টোবর মাসে তার না ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে নভেম্বরের প্রথমার্ধে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া। প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই বেগম খালেদা জিয়া চোখ ও পায়ের চিকিৎসার্থে লন্ডন যান।