English Version
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ১৩:৪৭

সরকারের আল্টিমেটাম আমলে নিচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইন ডেস্ক
সরকারের আল্টিমেটাম আমলে নিচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান সরকারের আলটিমেটাম আমলে নিচ্ছে না বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। একের পর এক আলটিমেটাম দেয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেনি অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে কম-বেশি কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি, তবে আইনানুযায়ী নির্ধারিত জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র মতে, দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫১টির স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরুর সময় শেষ হয়েছে বহু আগে। ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনানুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় দুই ধাপে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

তবে প্রথম ৭ বছরের মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে। যদি কোনো কারণে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এর মেয়াদ সর্বোচ্চ ৫ বছর বাড়াতে পারবে। আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে গমন ও স্থায়ী সনদ অর্জন করতে না পারলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তি এবং শিক্ষা সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিষয়ে তাগাদা দেয়া হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ পাস হওয়ার পর একই বছর আলটিমেটাম দিয়ে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার উদ্যোগই নেয়নি।

পরে দ্বিতীয় দফায় ২০১২ সালে, তৃতীয় দফায় ২০১৩ সালে, চতুর্থ দফায় ২০১৫ সালের জুন এবং পঞ্চম দফায় ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি এবং ষষ্ঠ দফায় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলটিমেটাম দেয়া হয়। ৬ বার সময় বেঁধে দেয়ার পরও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে ব্যর্থ হয় অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বশেষ ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয়কে এ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে সাতটি স্থায়ী ক্যাম্পাসে কম-বেশি কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছে।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু না করে আরও সময় চাচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চিঠিতে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব ধরনের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়। তা না হলে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

এদিকে, বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে শিগগির বৈঠকে বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠকে স্থায়ী ক্যাম্পাসে না যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, দি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, সিটি ইউনিভার্সিটি, জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়।

স্থায়ী ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে যে ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয় : আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, গ্রীণ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, শান্তা-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেনি, তবে আইনানুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে স্থায়ী ক্যাস্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ এবং বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি। জমি ক্রয় করলেও নির্মাণ কাজ শুরু করেনি যে ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় : স্টেট ইউনিভার্সিটি, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

আইনে দায়মুক্ত জমির কথা উল্লেখ থাকলেও ফাউন্ডেশনের জমিতে ক্যাম্পাস রয়েছে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের : সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়। আইনানুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কমে জমিতে ক্যাম্পাস নির্মাণ করেছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় : প্রাইম ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সেন্ট্রাল উইমেন’স ইউনিভার্সিটি। আর আইন অনুযায়ী জমি ক্রয় করেনি প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়। একাধিক ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কুইন্স ইউনিভার্সিটি। এটা সরকার কর্তৃক বন্ধ রয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখনও যাননি, যারা একাধিক ক্যাম্পাসে পাঠদান পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে অব্যাহত চাপ রেখেও সঠিক ধারায় আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এভাবে তারা বেশি দিন চলতে পারবেন না। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া তারা আর কোনো পথ খোলা রাখেননি।

ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ না মেনে নানা ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকান্ডে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সজাগ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।