English Version
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ১০:৫৯

রাজধানীর সড়ক মানেই খানাখন্দ

অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীর সড়ক মানেই খানাখন্দ

রাজধানীর সড়কগুলো আগে থেকেই খানাখন্দে ভরা ছিল। এর ওপর গত বৃহস্পতিবার থেকে তিন দিনের একটানা বৃষ্টি ও জলজট আরো বেশি নাজুক করে তুলেছে। এখন ঢাকার এমন কোনো সড়ক নেই, যেখানে খানাখন্দ ও বড় গর্ত নেই। প্রতিদিনই এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে নাগরিকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর একটু বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। তবে জলাবদ্ধতার কারণে যে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো সাময়িক সংস্কারকাজ নিয়মিতই চলছে।

টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে বেরিয়ে এসেছিল বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির পানি জমে এসব গর্ত আরো ভয়ংকর হয়ে উঠছে। বাসের চাকা পর্যন্ত আটকে যাচ্ছে এসব গর্তে। যানবাহনের গতি কমে যাওয়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে। তীব্র ঝাঁকুনিতে যাত্রীদের অবস্থা কাহিল।

রাজধানীর মূল পাঁচটি সড়কের একই অবস্থা। কুড়িল থেকে প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরা ও যাত্রাবাড়ী; আবদুল্লাহপুর থেকে মহাখালী ও ফার্মগেট হয়ে প্রেস ক্লাব; গাবতলী থেকে আজিমপুর; মহাখালী থেকে মগবাজার হয়ে গুলিস্তান এবং পল্লবী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়ক। এর মধ্যে আবদুল্লাহপুর থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত সড়কটিই একটু ভালো। এই পথে রাষ্ট্রীয় অতিথি, ভিভিআইপি ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের চলাচল সবচেয়ে বেশি। এই পাঁচটি সড়কের দৈর্ঘ্য ১৫০০ কিলোমিটার হলেও ৫২০ কিমি সড়ক চলাচলের অযোগ্য।

রাজধানীর প্রধান সড়ক কিংবা গলিপথ—প্রায় সবখানেই এখন এই অবস্থা, চলাচলে স্বস্তি নেই। পাঁচটি মূল সড়কের চারটিতেই চলাচলের জন্য কষ্ট। এসব মিলিয়ে রাজধানীর প্রায় ২৪০০ কিলোমিটার সড়কের অর্ধেকের বেশিই এখন বেহাল। মাঝেমধ্যে সিটি করপোরেশন জোড়াতালি দিয়ে কোনো রকম চলাফেরার ব্যবস্থা করে দিলেও তা সাময়িক। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে কাদা আর পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। বোঝার উপায় থাকে না কোথায় খানাখন্দ আর কোথায় সমতল। এ অবস্থায় চলাচল করতে প্রতিনিয়তই সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

দুই সিটি করপোরেশনের সড়ক মেরামতের চিত্র বলছে, প্রতিবছর মেরামতযোগ্য সড়কের পরিমাণে তেমন হেরফের হচ্ছে না, বরং প্রতিবছরই বরাদ্দ বাড়ছে। গত বছর দুই সিটি করপোরেশন ৫২০ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করেছে। চলতি বছর ৫১৯ কিলোমিটার মেরামতের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরে দুই সিটির সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৮৩১ কোটি টাকা।

তবে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত নতুন সড়ক ঠিকভাবে নির্মাণ করা হলে ১৫-২০ বছর হাত দিতে হয় না। ঢাকার সড়ক যেহেতু পুরোনো, তাই একবার ভারী মেরামত করলে ৬-৮ বছর টিকে থাকার কথা। একইভাবে সড়কগুলো ১০-১৫ টন ওজনের গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়। কিন্তু সেখানে চলে ৪০-৫০ টন ওজনের গাড়ি। এতে সড়কগুলো ওজন সহ্য করতে না পেরে নষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে বৃষ্টির পানি জমে থাকা পানিতেও সড়ক নষ্ট হচ্ছে।

জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে নগরবিদ ও প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, শুধু জলাবদ্ধতার কারণে সড়কের এই অবস্থা হয়েছে, সেটি ঠিক নয়। ভারী যানবাহন চলাচল এবং নিম্নমানের কাজের কারণেও সড়ক ভেঙেছে। বছরের শুরুতেই সিটি করপোরেশনের সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির একটি পথনকশা বা রোডম্যাপ থাকলে এমন হতো না। এ ক্ষেত্রে সময় অনুযায়ী কাজ শুরু ও শেষ করতে হবে এবং অবশ্যই বর্ষা মৌসুমে সড়ক খোঁড়া বন্ধ রাখতে হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড্ডা এলাকায় বেশিরভাগ শাখা সড়কই ভাঙাচোরা। খানাখন্দে ভরা খিলক্ষেত এলাকার খিলক্ষেত রেলগেট-ডুমনী সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কচুক্ষেত সড়কটির প্রথম অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। উত্তরার জসীম উদ্দীন চত্বর থেকে বিমানবন্দর আসার পথে প্রধান সড়ক কার্পেটিং করা থাকলেও মাঝেমধ্যেই দেবে গিয়ে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গাবতলীর আমিনবাজার থেকে সদরঘাট বাবুবাজার পর্যন্ত বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ ঢাকার ফুলবাড়িয়া মাজার থেকে সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট চত্বর থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত রাস্তার অবস্থাও খুবই খারাপ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বাইপাস সড়কের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পূর্বপাশের অংশ কিছুদিন আগে মেরামত করে ডিএনসিসি। কিন্তু বৃষ্টি হলেই পানি জমে এ সড়কে।

সর্বশেষ অতিবর্ষণে এখানে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। ফলে রাস্তাটির বিজয় সরণি পয়েন্ট থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় পুরো অংশ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। কাকরাইল থেকে মৌচাক পর্যন্ত অংশের রাস্তার আধুনিকায়ন কাজ চলছিল বেশ কিছুদিন ধরে। টানা বর্ষণের ফলে সড়কটির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বিজয় সরণি-তেজগাঁও ফ্লাইওভারের তেজগাঁও পয়েন্টের রাস্তাটুকু কিছুদিন আগে কোল্ড মিলিং মেশিন দিয়ে যানবাহন চলার উপযোগী করেছিল ডিএনসিসি। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ওই অংশ আবারও ভেঙেচুরে গেছে। মিরপুরের কালশী সাংবাদিক কলোনির পাশের সড়কটির অবস্থাও একই রকম। রোকেয়া সরণির কাজীপাড়ার প্রধান সড়ক থেকে পানি সরে গেলেও পাশের উপসড়কগুলোতে গতকালও পানি জমে ছিল। এক দিন আগেই সেখানকার প্রধান সড়কে নৌকা চলেছে। সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার কোনো কর্মীকেই তদারক করতে দেখা যায়নি কাল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, এবার সারাদেশসহ রাজধানী ঢাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিবর্ষণজনিত কারণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার অনেক রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মেয়র আরো বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সড়ক সংস্কারের সব টেন্ডার প্রক্রিয়া সমাধান করেছি। কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। বৃষ্টি শেষ হলেই সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কুদরত উল্লাহ বলেন, বর্ষা মৌসুমে অনেক সড়কে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশি গর্ত হয়েছে এমন সড়কগুলোতে ইট বিছিয়ে চলাচলের উপযোগী রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইট, বালু দিয়ে আপৎকালীন এই সংস্কারকাজ সিটি করপোরেশন নিজস্ব জনবল দিয়ে করছে। শুষ্ক মৌসুমে ভারী মেরামত করা হবে।