English Version
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০১৭ ১৮:৪৮

রাতে ইন্টারনেট অফার বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক
রাতে ইন্টারনেট অফার বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ

ব্লু হোয়েল গেইমটির সব লিংক বন্ধ এবং মোবাইল অপারেটরগুলোর রাতের বিশেষ ইন্টারনেট অফার ছয় মাসের জন্য বন্ধ করাসহ তিন দফা নির্দেশনা দিয়ে আজ আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং জে বি এম হাসান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেয়।

একই সঙ্গে আদালত রুলও জারি করে। দেশের সব মোবাইল অপারেটরগুলোর রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফার কেন বন্ধের নির্দেশ দেয়া হবে না- রুলে তা জানতে চেয়েছে আদালত।

এছাড়া তিন দফা নির্দেশনা হলো- ১. ব্লু হোয়েল বা এ জাতীয় ইন্টারনেট ভিত্তিক মরণখেলার গেইটওয়ে লিংক বন্ধ করতে হবে। ২. রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশের সব মোবাইল অপারেটরের রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফার ছয় মাসের জন্য বন্ধ থাকবে। ৩. ব্লু হোয়েলসহ এ জাতীয় ইন্টারনেট ভিত্তিক গেইমে আসক্তদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং দেয়া এবং অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।

তথ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসিকে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটকারীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।  শুনানিতে রিটকারীর আইনজীবী পল্লব বলেন, মোবাইল অপারেটররা রাতের সময়টাকে কেন তারা বেছে নিচ্ছে।

কারণ এ সময় যারা মোবাইল ব্যবহার করছে- তারা হচ্ছে টিনএজার। এদের ধ্বংসের জন্যই এসব বিশেষ অফার। মরণঘাতি গেমস্গুলোও তারা রাতের বেলায় খেলে। এসব কারণে এসব অফার বন্ধ করতে হবে। সুব্রুত বর্ধন, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার ও ব্যারিস্টার নূর আলম সিদ্দিক সুপ্রিমকোর্টের এ তিন আইনজীবী গত রোববার হাইকোর্টে এ রিট আবেদন দায়ের করেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রসচিব, শিক্ষাসচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব, আইনসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং মোবাইল অপারেটরদের রিটে রেসপনডেন্ট (প্রতিপক্ষ) করা হয়েছে।

ব্লু হোয়েল একটি অনলাইন গেইম, যা অংশগ্রহণকারীকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যায়। এই গেইমে খেলোয়াড়দের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিভিন্ন কাজ করতে দেয়া হয়, গেইমটির শুরুতে হালকা কিছু কাজ দেয়া হলেও ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর সব কাজ দেয়া হয়। সব শেষে চূড়ান্ত কাজ হিসেবে খেলোয়াড়কে আত্মহত্যা করতে বলা হয়।  রিট পিটিশনার সুব্রুত বর্ধন সাংবাদিকদের জানান, এ গেইমের শিকার হয়ে তার কন্যা অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণার (১৩) গত ৯ অক্টোবর আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল তার কন্যা। তিনি জানান, তার মেয়ে যেখানে একটা তেলাপোকা দেখলে ভয় পেতো সে মেয়ে এ গেইমের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার মনিটরিং জরুরি। শিশু কিশোর শিক্ষার্থীদের এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করতে দেয়ার ক্ষেত্রে আরো কঠোর হতে হবে। অন্যথায় এভাবে চলতে থাকলে অনেক পরিবারকে এরজন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে রাশিয়ায় ‘এফ৫৭’ নামে যাত্রা শুরু করে ব্লু হোয়েল গেইমটি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ফিলিপ বুদেইকিন নামের এক সাবেক মনোবিদ্যা শিক্ষার্থী গেইমটি তৈরি করেন। ওই গেইম খেলে ১৬ কিশোরীর আত্মহত্যার পর বুদেইকিনকে রাশিয়ায় আটক করা হয়। এ গেইমে বাংলাদেশেও আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমে আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গত সপ্তাহে বিটিআরসিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। এরপর বিটিআরসি তিন দিন আগে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। ইন্টারনেটে ব্লু হোয়েল কিংবা এর মতো জীবনবিনাশী কোনো গেইমের তথ্য পেলে ২৮৭২ নম্বরে ফোন করে তা জানাতে বলা হয় সেখানে।