English Version
আপডেট : ১৭ আগস্ট, ২০১৭ ০৯:৩৮

বঙ্গভবনে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী

সাধারণ সম্পাদক, আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক
অনলাইন ডেস্ক
বঙ্গভবনে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের তীব্র অসন্তোষের মধ্যে হঠাৎ করেই গত রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

বঙ্গভবন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ৭টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। রাত পৌনে ১০টায় তিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠক সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়টি তাদের আলোচনায় স্থান পায়। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীসহ তাদের আলোচনার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন। বৈঠকে বিচার বিভাগ ছাড়াও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক এবং বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়।

গতকাল রাত সাড়ে ১০টায় বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে ফটকের সামনের রাস্তায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। সেই সঙ্গে গতকাল (১৫ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু ভবন ঘিরে আত্মঘাতী বোমা হামলার যে পরিকল্পনা ছিল সেটাও আলোচনায় উঠে এসেছে। পাশাপাশি সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রায় এসেছে সে বিষয়টিও আলোচনা করেছি। ’ কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই সবকিছু বলা যাবে না। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। এখনো কারও সঙ্গেই আলোচনা শেষ হয়নি। আমরা রাষ্ট্রপতিকে দলীয় ও সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। আলোচনা শেষ হয়নি, আরও আলোচনা করতে হবে। ’ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আবার সাক্ষাৎ করবেন কিনা— জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেখা করতে যেতেও পারি। এটা হাইড (গোপন) করার কী আছে? ওপেন সিক্রেট। আমি কয়েক দিন আগে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আপনারা (সাংবাদিক) পাননি। পরে আমি তো অস্বীকার করিনি। আবার দেখা করতে গেলে আপনারা জানবেন। ’ রাষ্ট্রপতি কী পরামর্শ দিয়েছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কী পরামর্শ দিয়েছেন তা বলা যাবে না। আলোচনা শেষ হয়নি। ’ খুব শিগগিরই কি ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ করা হবে? উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। পরে জানাব। ’ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী বন্যাসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সরকার সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ আছে। তিনি বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জনগণকে সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এ সময় বন্যায় মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ত্রাণসামগ্রী যাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে হবে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে সরকার, রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে চলমান আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা ‘অবৈধ’ ঘোষণার রায় ১ আগস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের সমালোচনা করেন। রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করলেও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেছে। আওয়ামী লীগ মনে করে, রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘রাজনীতি’ রয়েছে। এর পেছনে ‘ষড়যন্ত্র’ও থাকতে পারে। আবার রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর প্রায় এক সপ্তাহ সরকার ও আওয়ামী লীগ নীরব ছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এ রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এর পরই মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে রায় নিয়ে সমালোচনা করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও রায় নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা ইতিমধ্যেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আসা ‘অনভিপ্রেত’ বিষয়গুলো বাদ দেওয়াই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য বলে দলের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের প্রয়োজন হয় না।