English Version
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০১:২৯

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলার রায় আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলার রায় আজ

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় করা দুটি মামলার রায় ঘোষণা আজ সোমবার (১৬ জানুয়ারি)। নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল ২০১৪ সালে পৃথকভাবে এই মামলা দুটি দায়ের করেন।

এর আগে গত ৩০ নবেম্বর চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন ১৬ জানুয়ারি এই রায় ঘোষণা দিন ধার্য করেন। এই মামলার সব আসামিরই সর্বোচ্চ শাস্তি চান নিহতদের স্বজন ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। 

আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌশলী এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। কেবল নিহতদের স্বজনও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা নয়, চাঞ্চল্যকর এই মামলায় কি রায় হয় তা, জানার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা দেশের মানুষ।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনকে অপহরণ করা হয়। একই সময়ে একই স্থানে আরেকটি গাড়িতে থাকা নারায়ণগঞ্জ আদালতের প্রবীণ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার চালককে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেন র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা মেজর আরিফ, তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতা করেন লে.কর্নেল তারেক সাঈদ, লে. কমান্ডার মাসুদ রানা। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। 

মামলার র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মন্ডল। 

মামলার আসামিদের মধ্যে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনের পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। 

ঘটনার ১৭ মাস পর মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনিসহ মোট ২৩ আসামি এ মামলায় কারাগারে রয়েছেন, পলাতক ১২ জনের মধ্যে আটজনই র‌্যাব সদস্য।

চাঞ্চল্যকর এই মামলা রায়ের আগে নারায়ণগঞ্জের সাবেক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, অভিযুক্তদের এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক যেন আর কেউ এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটাতে সাহস পাবে না। আর কেউ স্বামী হারা হবে না, আর কোন সন্তান বাবা হারা হবে না, কোন মায়ের বুক খালি হবে না। আমরা আদালতের কাছে প্রত্যাশা করছি, আসামিদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। 

কারাগারে থাকা আসামিদের পাশাপাশি পলাতকদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান বিউটি।

আইনজীবী চন্দন সরকারে জামাতা বিজয় পাল বলেন, আমরা আমাদের স্বজনদের হারিয়েছি। যে কোন হত্যাকান্ডের শাস্তি হওয়া উচিত। আমরা চাই, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হোক। তিনি আরো জামাতা বলেন, যত দূর জানতে পেরেছি, তার সামনে একটা ঘটনা ঘটছিল, তিনি সেটার প্রতিবাদ করতে গিয়েই হত্যার শিকার হন।   আদালতের উচিত, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, যেন কেউ আর এ ধরনের হত্যাকান্ড ঘটানোর চিন্তাও করতে না পারে, বলেন বিজয়।

কারাগারে ২৩ আসামি হলেন- নূর হোসেন, লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়ব, কনস্টেবল মোঃ শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্নেন্দ বালা, কর্পোরাল রুহুল আমিন, এএসআই বজলুর রহমান, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, সৈনিক নুরুজ্জামান, কনস্টেবল বাবুল হাসান, সৈনিক আসাদুজ্জামান নূর, নূর হোসেনের সহযোগী মোর্তুজা জামান চার্চিল।

পলাতক ১২ আসামি হলেন- কর্পোরাল মোঃ মোখলেছুর রহমান, সৈনিক আব্দুল আলীম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবীর, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, নূর হোসেনের সহযোগী সেলিম, সানাউল্লাহ ছানা, ম্যানেজার শাহজাহান, ম্যানেজার জামাল উদ্দিন।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আদালতে ৭ হত্যার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সাক্ষী ও প্রমাণ দাখিল করা হয়েছে। আদালতের কাছে হত্যাকান্ডে নূর হোসেন ও র‌্যাব সাতসদ্যরা যে জড়িত তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, ডকুমেন্টসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, প্রত্যেক আসামির সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি হবে আশা করি।

এদিকে আলোচিত সাত খুন মামলার রায়কে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক।